সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০০৮

কওমি মহিলা মাদ্রাসার অন্দরে…(৩)

সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০০৮ – ১২:৩২ পূর্বাহ্ন
থাকা-খাওয়া:

সাধরনত একেক জামাতের মেয়েরা (শ্রেনী । এর প্রকার ভেদ পরে লিখছি) একেক রুমে থাকে। এক রুমের মেয়ে অন্য রুমে ঘুমানো দন্ডনীয় অপরাধ। সাধারনত হল রুম থাকে বিশাল। এক রুমে ১০০ জন থাকতে দেখেছি। উদ্ভাস্তুদের মত লেগেছে। ভয়ন্কর অবস্থা হয় মধ্যে রাতে এত গুলো মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে যখন পুরো রুমের বাতাসটা ভারি হয়ে যায়। বিশ্রি গন্ধে ভরে থাকে রুম।

কোন কোন মাদ্রাসায় ঠিক পাশেই থাকে বড় আপা -বড় হুজুর গুছানো এপার্টমেন্টে। তাদের থাকার খরচ মাদ্রাসার খরচের সাথেই যুক্ত। ছাত্রীদের বেতনের টাকা আর কালেকশনের নামে ধান্ধাবাজির টাকা দিয়ে আরামে ঘুমায়। আর এত গুলো মেয়ে অসাস্থাকর পরিবেশে দিন-রাত কাটায়।

থাকা খাওয়া ,ক্লাস সব হয় একই রুম। সব কিছু ফ্লোরিং। লিখার জন্য কাঠের ডেস্ক বা বেন্চ থাকে। মাটিতে বসে তার উপর লেখা-পড়া করে থাকে ছাত্রীরা। মেয়েরা বাসা থেকে তোষক, চাদর, বালিশ ,প্লেট, গ্লাস, বাটি ইত্যাদি নিয়ে আসে। সবার সিট নির্দিষ্ট থাকে। প্রত্যেকের থাকে নির্দিষ্ট মাপের টিনের ট্টান্ক। সেখানে তার সব জিনিষ পত্র রাখবে, সর্বদা তালা মেরে রাখার নির্দেশ রয়েছে। চাবি থাকে হয় গলায় চেইনের সাথে অথবা পায়জামার রিবনের সাথে বাধা।

৮০% মেয়েরা মাদ্রাসাতেই খায়। বেতনের সাথে খাওয়ার টাকা দেয়া থাকে। বেতন মাদ্রাসা ভেদে ১০০০-২০০০টাকা। সাধারনত মেনু হচ্ছে : ডাল +ভাত / শুকনা খিচুরী (রেয়ার) - মাছ/মাংস/ ডিম+ডাল+ভাত - ডাল+আলু ভর্তা। ( সকাল- দুপুর- রাত) । বছরে ২-৩ বার সকালে কলা+ পাউয়ারুটি / কাঠাল +মুড়ি ও খেয়েছি:) । শাক -সবজি একেবারে খাওয়া হয়না বললেই চলে। মাঝে মধ্যে অবশ্য ডালের মধ্যে শাক-টাক দিয়ে দেয়।

খাবার দেয়ার সময় হলে বেল বাজে। মেয়েরা লাইন ধরে খাবার আনতে যায়। কোথাও কোথাও রোল কল ও হয়। কেউ ডাবল নিলো কিনা হয়তো তা বোঝার জন্য। মেয়েদের কে যখন ডাল আর আলু ভর্তা দেয়া হচ্ছে টের পেতাম পাশের কড়াইতে শিক্ষক-শিক্ষিকার জন্য দেশি মুরগি ভূনা হচ্ছে। সব যায়গাতেই বুয়াদের সাথে ভালো খাতির থাকলে সুবিধা পাওয়া যায়। টিচারদের খাবারও খাওয়া যায় মাঝে মধ্যে। মাঝে মধ্যে সে সমস্ত মেয়েদের সাথে বুয়াদের ভালো খাতির থাকে তাদেরকে একটু শাক বা ডিম ভাজি করে দেয়।

যেসব মেয়েরা ( যাদের বাসা কাছে এবং সচ্ছল নয়, বাসা কাছেই। মাদ্রাসায় খাবরের খরচ থেকে বাসা থেকে খাবার পাঠানোটা তাদের জন্য খরচ কম পড়ে)। বাইরে থেকে খাবার আসতো তাদের সাথে খাবার চেন্জ করেও খেতো অনেক মেয়ে। বাসা থেকে আসা শুটকি ভর্তা নিয়ে তার মাংসের টুকরা টা দিতো । সেই মেয়েও খেত খুব তৃপ্তি নিয়ে। আবার কিছু ধনীর কন্যা যারা মাদ্রাসার খাবার খেতে পারেনা তাদের খাবারও আসে বাসা থেকে ৬ বাটির টিফিন ক্যারিয়ারে। বন্ধবীদের জন্য স হ খাবার।

বাড়তি খাবার যেমন বিস্কুট, চানাচুর ইত্যাদি দারওয়ানকে দিয়ে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আনানো যায়। এক মাদ্রাসায় দেখলাম মাদ্রাসার ভেতরেই দোকান। সেখানে পাউয়া রুটি, কলা, চিপস,এলাচি বিস্কুট, লাড্ডু, চানাচুর, আচার, মোমবাতি ইত্যাদি পাওয়া যায়। বুয়ারা দোকানদারি করে। মাদ্রাসায় সবচেয়ে দামি খাবার হচ্চে “কাচা মরিচ”। কেউ একটা কাচামরিচ দিলে চির কৃতগ্গ হয়ে থাকা হয়।

এই ডাল আর আলু ভর্তা খেতে খেতে জান শেষ। পুষ্টির প্রতি মাদ্রাসার কর্তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তারা হয়তো জানেইনা। ২-৩ বছর ধরে মাদ্রাসার ভেতরে থাকা মেয়েদেরকে দেখলেই বোঝা যায় অপুষ্টিতে ভুগছে।নেই কোনো খেলা ধুলার ব্যবস্থা। আরে কি বলি! এখানে তো জোরে হাটাই নিষেধ। মাটি ব্যথা পাবে। তারপর মরলে পরে কবরে দু্পাশ থেকে চাপ দিবে যে!

চলবে……।

(লেখাগুলো আসলে আমার দেখাগুলো)

কোন মন্তব্য নেই: